পুরোনো খেলার নিয়ম বদলাতেই আমরা রক্ত দিয়েছি: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বলেছিলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে। এদেশ যে সিস্টেমে চলে তা পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা বলেছি এই মাফিয়া সিস্টেমের সাথে খেলব না। পুরোনো খেলায় আমরা অংশ গ্রহণ করব না। এই পুরোনো খেলার বিরুদ্ধেই গণঅভ্যনত্থান হয়েছে। পুরোনো খেলার নিয়ম বদলাতেই আমরা রক্ত দিয়েছি। আমরা জানি খেলার নিয়ম এখনও বদলায়নি যদি খেলা বন্ধ না হয় তবে আরেকটা গণঅভ্যত্থান জন্য প্রস্তুতি নেন।
শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরে চাষাঢ়া বিজয়স্তম্বের সামনে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে জুলাই পদযাত্রা তোরণ আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীরা রাতের আধারে এসে পদযাত্রার জনস্রোতকে বন্ধ করতে জন আতংক তৈরি করতে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন,গণঅভ্যুত্থানের পরও নারায়ণগঞ্জে কতগুলো মার্ডার হয়েছে। কেন নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা এখনও ঠিক হচ্ছে না, আমার সরকারের কাছে সেই জবাব চাই। আওয়ামী লীগের সেই মাফিয়াতন্ত্র, দখলতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র পুর্ণবাসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ব্যবসাগুলো পর্ণূবাসিত হচ্ছে। আমাদের জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতদের বাসায় গিয়ে গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যেসকল শহীদ পরিবার মামলা করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সেই পরিবারেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের যে অভায়রন্য তৈরি করা হয়েছিল আমরা সেই সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ভেঙ্গে ফেলব। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির যারা নারী নেত্রী রয়েছে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি কোন হুমকিতে ভয় পাই। আমাদের বোনেরা কি ভয় পায়। আমরা কখনও ভয় পেয়েছি। আমরা ভয় পাই না ভয় পাবো না।
নাহিদ বলেন, নারায়ণগঞ্জকে মাফিয়াতন্ত্র, দখলতন্ত্র, ও মাফিয়াতন্ত্র থেকে মুক্ত করতে হবে। জনতার নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলতে হবে। আমার জানি নারায়ণগঞ্জ শ্রম ও শিল্পনগরী। গণঅভ্যত্থানে আমার দেখেছি নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতা কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া, সাভার, ঢাকার প্রবেশপথে আওয়ামী সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্টদের ঢাকায় ঢুকতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জবাসী বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বলেই ঢাকাবাসী রাজপথে নেমে এসেছিল। আমরা নারায়ণগঞ্জের সেই ইতিহাসকে শ্রদ্ধা করি। গণঅভ্যত্থানে নারায়ণগঞ্জের নাম র্স্বণাক্ষরে লেখা থাকবে। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ৫৬ জন শহীদ হয়েছে। আমরা সকল শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তাদের রুহের মগফেরাত ও আহতের সুস্থতা কামনা করি। ১৮ জুলাই কম্লিট শাটডাউনের প্রথমদিন। এই নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, উত্তরা, সভার, আশুলিয়াসহ সারা বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। সবাই নেমে এসেছিল। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নেমেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমরা তাদের বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিরোধ দিবস। পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলো ১৭ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, পুলিশ দিয়ে স্টুডেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছিল। আমরা কম্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলাম। সেই কমপ্লিট শাট ডাউনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, মেহেনতী মানুষ পুরো রাজপথ দখল করে গণঅভ্যুত্থান সফল করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছি, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রটেক্ট দিতে হবে। মাফিয়াতন্ত্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু দেশে উল্টো ঘটনা ঘটছে। ছোট-মাঝারি ব্যসায়ীরা চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের আইনি সুরক্ষা দিতে হবে। আইনশংখলা পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে। যানজট দুর করতে হবে এবং চাঁদাবাজ মুক্ত করতে হবে। নারায়ণগঞ্জকে আর কোনো পরিবার বা গডফাদারের কাছে বর্গা দিতে চাই না।
নারায়ণগঞ্জবাসীকে আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, গনঅভ্যুত্থানের মতো আপনাদের জাগ্রত থাকতে হবে। আমরা যেন পুরোনো বন্দোবস্ত ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করবো। জনগণের নারায়ণগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করবো।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত পরশু আমাদের উপর হামলা হয়েছিলো। যারা এই হামলার পক্ষে কথা বলছেন, আওয়ামী লীগের ডেডলিস্টে তারা নেই। আওয়ামী লীগ বলে, তারা ফিরলে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ গড়বে। আওয়ামী লীগের ডেডলিস্টে আছি আমরা। আওয়ামী লীগের সাথে আপনাদের ব্যবসাপাতি ছিলো, আপনাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী কারও কারও মেয়ের জামাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমাদের মৃত্যু ডেকে আনবে। আপনি যেভাবে সুশীলতা দেখাতে পারেন, আমি হাসনাত আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের সাথে সুশীলতা দেখাবো না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। গোপালগঞ্জের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের তওবার সুযোগও নেই। মনে রাখতে হবে, কেয়ামতের পরে তওবা কাজে লাগে না। আওয়ামী লীগ যদি ফিরে, তার পরিণতি কি হবে তা আপনারা গোপালগঞ্জে দেখেছেন। যেই বুদ্ধিজীবীরা পয়সার জন্য হাসিনার সময় মগজ বিক্রি করেছিলো, যারা কলম বিক্রি করেছিলো, যারা জিহবা এই গণহত্যার পক্ষে কথা বলেছে, তারা হচ্ছে জ্ঞানপাপী। এদের দিয়ে বাংলাদেশ বিনির্মান সম্ভব নয়। আমরা বাংলাদেশ উইদআউট আওয়ামী লীগ গঠন করা শুরু করেছি।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশি রাজনৈতিক দল না। আওয়ামী লীগ ভারতীয় দল। এ কারণেই তারা বলে ভারতকে যা দিয়েছি ভারত সেটা আজীবন মনে রাখবে। আমরা বলি শুধু তোমাদের জীবদ্দশায় নয় তোমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যদি ভারতের সেবাদাসত্ব বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিবে না। আওয়ামী লীগের প্রতিবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সেবাদাস জাতীয় পার্টি ১৪ দল। তারা বাংলাদেশে মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচনগুলো বৈধতা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সকল দোসরকে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
তিনি বলেন, কম্বলের লোম বাজতে গেলে যেমন কম্বল খুজে পাওয়া যাবেনা। আওয়ামী লীগ অস্তিমজায় সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের মধ্যে ভালো নেতা খুঁজতে গেলে আওয়ামী লীগ উজাড় হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, একটা দুইটা জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা করে আমাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সামনে জীবন দিয়েছে আর শপথ নিয়েছি এই বাংলাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীদেরকে কখনও ফিরে আসতে দিবো না। আওয়ামী লীগকে ফেরানোর জন্য ভারতীয় শক্তিগুলো একযুগে মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে তারা আমাদের হুমকি দেখাতে চায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ফাউল খেলায় যোগ দিতে চায় নাই। ১৪ ও ১৮ এর নির্বাচনে এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখয়িছে তোমাদের ফাউল তোমরাই বিতাড়িত হয়ে যাবে। কুখ্যাত শামীম ওসমান বলেছিলো, ওরা আমাদের সাথে বন্ধুকের খেলা খেলবে, সন্ত্রাসীর খেলা খেলবে। আর আমাদের শহীদ ভাইয়েরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করেছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী প্রমুখ।
বিষয়:
নাহিদ ইসলাম
নারায়ণগঞ্জ
স
পুরোনো খেলার নিয়ম বদলাতেই আমরা রক্ত দিয়েছি: নাহিদ
NewsBD2727
0
Post a Comment